মো. নুরুল করিম আরমান, লামা |
বান্দরবান জেলার আলীকদম-জালানিপাড়া-কুরুকপাতা-পোয়ামুহুরী সড়ক নির্মাণের ফলে অপরিসীম সম্ভাবনা জেগেছে। এ সড়ক বান্দরবানের অদেখা সৌন্দর্য উন্মোচন করবে পর্যটকদের সামনে। পর্যটনকে কেন্দ্র করে প্রসারিত হবে এ অঞ্চলের অর্থনীতিও। ১৬ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়নের (১৬ ইসিবি) মেজর ও প্রকল্প কর্মকর্তা মো. ইশরাকুল হক এক মিডিয়া ব্রিফিং এ এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, এ সড়ক প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল প্রকল্প এলাকায় পর্যটন শিল্পের বিকাশকে সহজকরণ, গ্রামীণ জনগণের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি ও পার্বত্য চট্টগ্রামের আর্থসামাজিক উন্নয়ন। এছাড়াও কৃষিজাত পণ্যের বিপনন এবং কৃষি নির্ভর শিল্পোন্নয়নে, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাসহ অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণে সহায়তা করা। সড়কটির ১০ কিলোমিটার ভিউপযেন্টে আয়োজিত মিডিয়া ব্রিফিং এ বান্দরবান জেলা, লামা ও আলীকদম উপজেলার প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
সেনা সদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ের আগে ২০২২ সালের ৬ জুন শেষ করেন জানিয়ে প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর মো. ইশরাকুল হক জানান, এ সড়ক নির্মাণে অর্থবরাদ্দ ছিল ৫০৯.২৯ কোটি টাকা। প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ব্যয় সংকোচন করে ৪৭৪ কোটি ৪০ লাখ টাকায় প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হয়। সড়কটি নির্মাণের ফলে মুরুং, ত্রিপুরাসহ বৃহত্তর করুকপাতা ইউনিয়নে বসবাসরত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জীবনে আর্থ-সামজিক উন্নয়ন হবে। এ সড়কটি ৩১৭ কিলোমিটারের সীমান্ত সড়কের সাথেও সংযুক্ত হচ্ছে। দেশের ভূখন্ড রক্ষা ও সীমান্তে নিরাপত্তা বৃদ্ধিতেও এটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। সড়কটি এ অঞ্চলের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর উন্নতির পাশাপাশি সুখী, সমৃদ্ধ, সুষম উন্নয়নের বাংলাদেশ গড়ার পথে এক বড় অর্জন।
আলীকদম-পোয়ামুহুরী সড়কের ভিউপয়েন্টে সোমবার বিকেলে অনুষ্ঠিত মিডিয়া ব্রিফিং এ আরও বলা হয়, আলীকদম উপজেলার মাথাপিছু আয় জাতীয় আয় হতে শতকরা ৩০ ভাগ কম ছিল। শিক্ষা সুবিধা ও স্থাপনার অপর্যাপ্ততার কারণে আলীকদমের দক্ষিণে বসবাসরত উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর স্বাক্ষরতার হার খুবই কম। ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডাক্তারের অপ্রতুলতার কারণে এ জনপদের মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ছিল। কুরুকপাতা ইউনিয়নের সাথে উপজেলা সদরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল খুবই নাজুক। নদীপথ ছিল একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম। পাশাপাশি দূর্গম অঞ্চলে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং নিরাপত্তা অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনায় এ সড়ক নির্মাণ ছিল জরুরি। বর্তমান সরকার পার্বত্য অঞ্চলে উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে সচেষ্ট আছে। সরকার একটি নিরাপদ টেকসই, ব্যয় সাশ্রয়ী রোড় নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আলীকদম-জালানীপাড়া-কুরুকপাতা-পোয়ামুহুরী সড়ক প্রকল্পটি একনেকে পাশ করে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটির কাজ বাস্তবায়নের জন্য সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ সড়কে ৪৭৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৭.৫ কিলোমিটার কার্পেটিং রাস্তা ছাড়াও রয়েছে ১০টি ব্রিজ, ১১টি কালভার্ট, ৪টি ভিউ পয়েন্ট। ক্রস ড্রেন, সাইট ড্রেন, রিটেইনিং ওয়াল, আর্থ ওয়াটার ড্যাম, রোড সাইন এ সড়ক প্রকল্পের আওতায় ছিল।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিলেন ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাসুদুর রহমান, ১৬ ইসিবির প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. মানুতাসির মামুন ও প্রকল্প কর্মকর্তা মো. ইশরাকুল হক।
এদিকে স্থানীয় কুরুকপাতা চেয়ারম্যান ক্রাতপুং মুরুং বলেন, আলীকদম-জালানিপাড়া-কুরুকপাতা-পোয়ামুহুরী সড়ক নির্মাণের ফলে মুরুং, ত্রিপুরাসহ বৃহত্তর করুকপাতা ইউনিয়নে বসবাসরত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জীবনে আর্থ-সামজিক উন্নয়ন হচ্ছে। আগে কুরুকপাতা থেকে উপজেলা সদরে যেতে ২-৩ দিন সময় লাগত। নান্দনিক সড়ক নির্মাণের ফলে এখন ৩০-৩৫ মিনিটের মধ্যে উপজেলা সদরে পৌঁছানো যায় বলেও জানান তিনি।