রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি |
কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় এবং আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ি তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো ফলনে ভালো দাম পাওয়ায় স্থানীয় চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। মৌসুমের শুরুতে বড়, মাঝারি বা ছোট, যেকোনো আকারের পাহাড়ি তরমুজ টসটসে এবং স্বাদে মিষ্টি ও রসালো ফলে বাজারে ভরপুর থাকলেও দাম বেশ চড়া। প্রতি বছর রাঙ্গামাটির উৎপাদিত তরমুজ স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে বাজারজাত হয়ে যায় ঢাকা, চট্টগ্রামসহ জেলার বাইরে। তরমুজ চাষে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন বহু চাষি ও কৃষক পরিবার। এতে চাষিদের বিপুল অর্থনৈতিক আয়ের পাশাপাশি বিশেষ মুনাফা লাভের সুবিধা পান চাষিরা।
গত বছরের শেষের দিকে রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই হ্রদের পানি কমতে শুরু করে । হ্রদের পানি কমাতে থাকায় হ্রদের তীর ঘিরে জলে বাসা জমি ভেসে উঠে। যার ফলে গত বছরের তুলনায় এবছর তরমুজের চাষ বেশি হয় এবং ফলনও ভালো হয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নানিয়ারচর উপজেলা থেকে শহরের বনরূপা বাজারের সমতাঘাটে তরমুজ বিক্রি করতে আসা চাষী মোঃ আমির হোসেন জানান, এবার কাপ্তাই হ্রদের পানি কম থাকায় এবং কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় এবছর তরমুজের ভালো ফলন হয়েছে এবং তরমুজ বিক্রি করে চাষিরা লাভবানও হচ্ছে। এবার স্থানীয় বাজারে প্রচুর তরমুজের চাহিদা রয়েছে। চাষীরা তাদের প্রাপ্য ন্যায্য দামও পাচ্ছেন । তিনি আরো জানান, এবছর ৬০ একর জমিতে তরমুজের চাষ করেছেন এবং এ পর্যন্ত বিক্রি করছেন ১৮ লাখ টাকা।
বরকল উপজেলা থেকে শহরের বনরূপা বাজারের সমতাঘাটে তরমুজ বিক্রি করতে আসা চাষী মোঃ নজরুল জানান, বৃষ্টিপাত না থাকায় এবং কাপ্তাই হ্রদেও পানি না বাড়ায় তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। এ বছর তিনি এক কর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন।
রাঙ্গামাটি শহরের পাইকারী তরমুজ ব্যবসায়ী দীপংকর চাকমা জানান, এ বছর তরমুজের ফলন ভালো হওয়ায় চাষিদের কাছ থেকে কম দামে তরমুজ ক্রয় করতে পারচ্ছি। ছোট-বড় ও মাঝারি ধরণের তরমুজ পাইকারী দরে ৫০ থেকে ৮০ টাকা দরে ক্রয় করছি। তা খুচরা ব্যবসায়ীদের নিকট ১০০ থেকে ২০০টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে এ বছর তরমুজের ব্যবসায় ভালো লাভবান হওয়া যাচ্ছে বলে তারা জানান।
রাঙ্গামাটি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে উপ-পরিচালক আপ্রু মারমা জানান, প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুম শুরুতেই জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ২০০ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষাবাদ হয়েছে। এবার তরমুজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫০ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টর জমিতে ৪০ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদিত হয়েছে। এ পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ১৫০ হেক্টর জমিতে ৬ হাজার মেট্রিক টন। তবে এ মৌসুমে ৭ হাজার ২০০ মেট্রিক টন অর্জিত হবে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি আরো জানান, সবচেয়ে বেশি তরমুজের আবাদ হয়ে থাকে লংগদু উপজেলায়। এছাড়া সদর ,বরকল, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি, নানিয়ারচর ও বিলাইছড়ি উপজেলাতেও চাষাবাদ করা হয়। তবে এ বছর প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না হওয়ায় তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু পাহাড়ের মাটির উর্বরতা কম থাকায় ২৫০ হেক্টর জমির মধ্যে ২০০ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষাবাদ হয়েছে।