পাহাড়ের কথা ডেস্ক |
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, ঢাকায় রাতের শেষ ভাগকে ছিনতাইয়ের জন্য বেছে নেয় ছিনতাইকারীরা। শনিবার গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত দুই পুলিশ সদস্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘ঢাকায় রাতের শেষ ভাগের সময়টাকে ছিনতাইকারীরা বেছে নিতে চায়। এমনিতেও রাতে ঢাকা শহর ফাঁকা হয়ে যায়। ২টার পর রাস্তা আরও অনেক ফাঁকা হয়ে যায়। আমরা বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছি।’
গত শুক্রবার রামপুরা টিভি ভবনের সামনে ছিনতাইকারীর ধারাল অস্ত্রের আঘাতে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সহকারী প্রযোজক রাকিবুল হাসান রানা গুরুতর আহত হন। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন। গতকাল শনিবার সকালে ফার্মগেট এলাকায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে মৃত্যু হয় পুলিশ সদস্য মনিরুজ্জামানের।
এসব বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আরও কীভাবে আমাদের পুলিশিং বাড়ানো যায়, সে বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করছি। যেসব ছিনতাইকারী শেষ রাতের দিকে ছিনতাই করার সময় হিসেবে বেছে নেয়, আশা করছি তারা আর সেটা পারবে না। শুক্রবার যে ঘটনাটা ঘটেছে, সেটা নিয়ে কাজ করছি। জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
জঙ্গিবাদ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি, নিয়ন্ত্রণে আছে
দেশ থেকে জঙ্গিবাদ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি, নিয়ন্ত্রণে আছে বলে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ প্রধান। ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আজ থেকে ৭ বছর আগে ২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজানে বিদেশি নাগরিকদের অতর্কিত জিম্মি ও হত্যা করে জঙ্গিরা। তাদের উদ্ধার করতে গিয়ে আমাদের দুই জন সিনিয়র পুলিশ সদস্য শহীদ হন। আজকেও আমাদের মনে এইটা দগ্ধ ঘায়ের মতো জ্বলে। দেশি-বিদেশি আন্তর্জাতিক চক্রান্তে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করতে ২০১৫-১৬ সালে বিভিন্ন জঙ্গি হামলা ঘটানো হয়। হলি আর্টিজান হামলার পর আমাদের উন্নয়ন সহযোগীরা উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে ভয়ে দেশ ছেড়ে চলে যেতে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘তখন প্রধানমন্ত্রী শেখা হাসিনার নেতৃত্বে পুলিশ ও জনগণ জঙ্গিদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। সমস্ত উন্নয়ন সহযোগীদের স্পষ্ট দেয়া হয়, আমরা বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিদের উৎখাত করব, আপনারা ফিরে আসুন। তারপর তারা ফিরে আসেন এবং তখন আমাদের উন্নয়ন যাত্রা অব্যাহত রয়েছে। এর পর থেকে দেশে জঙ্গিদের নিয়ন্ত্র, গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনা অব্যাহত হয়েছে। ফলে সারা দেশে জঙ্গি নিয়ন্ত্রণে আছে। জঙ্গিবাদ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি, আমরা বলব যে, এইটা নিয়ন্ত্রণে আছে।’
হলি আর্টিজানের ঘটনার স্মৃতিচারণ করে কমিশনার বলেন, ‘হলি আর্টিজান হামলায় বিদেশিসহ মোট ২২ জন নিহত হন। এই ঘটনায় সিটিটিসি তদন্ত করে। তদন্ত শেষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। যদিও এ ঘটনার অনেক অভিযুক্ত বিভিন্ন সময় জঙ্গি হামলা করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে মারা যান; আর বাকিদের সাঁজা হয়ে গেছে। ‘আমরা এখন অনেকটা বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। আশা করি ভবিষ্যতে জঙ্গিমুক্ত বাংলাদেশ ধরে রাখতে পারব।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জেএমবি, নব্য জেএমবিসহ দেশে জঙ্গিবাদ নাই বললেই চলে। তবে জঙ্গিবাদের সুপ্ত বীজ লুকিয়ে থাকতে পারে। সম্প্রতি নতুন কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এর মধ্যে শারক্বীয়া একটা। এই সংগঠনের ডাকে অনেক তরুণ পাহাড়ে হিজরত করেছিল ও প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। পুলিশ-র্যাব তাদের অনেককে গ্রেপ্তার করেছে। আবার অনেকে ভুল বুঝতে পারে আত্মসমর্পণ করেছেন। আমরা কয়েক দিন আগেও শারক্বীয়ার প্রধানকে গ্রেপ্তার করেছি। তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা হয়েছে। আশা করছি, যে নামেই আসুক না কেন, বাংলাদেশে তারা স্থান পাবে না।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘এটিইউ, সিটিটিসি ও র্যাব জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অনবরত কাজ করে যাচ্ছে। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ ও খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া জঙ্গিবাদের বিষয়ে মানুষ জনকে সচেতন করার লক্ষ্যে আমরা বিভিন্ন সময় নানা প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি ও তা বাস্তবায়ন করেছি। যা দুই-চার জন ভুল পথে যাওয়া চিন্তা-ভাবনা করেছিল, তাদের যদি ইসলামের সঠিক আদর্শটা তুলে ধরতে পারি, তাহলে তারাও হিংস্রতা ছেড়ে শান্তির পথে আসবে।’ দেশের বিজ্ঞ আলেম সমাজকে ধর্ম সভায় জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলার আহ্বান জানান তিনি। সূত্র- দৈনিক বাংলা