মো. নুরুল করিম আরমান |
বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের বুক চিরে নেমে আসা আন্দারী খালের পানি প্রবাহের ওপর নির্ভর আশপাশের কয়েক হাজার হাজার মানুষ। যুগযুগ ধরে সুপেয় পানি পানসহ দৈনন্দিন গোসল, ধোয়া-মোছার কাজ ও জমিতে সেচ দেওয়া হয় এ খালের পানি দিয়ে। কিন্তু এসব উৎস্য বিনষ্ট করে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের একটি কোম্পানী এ খালের কোলঘেষে রাবার প্রসেসিং ফ্যাক্টরি নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। এ ফ্যাক্টরির নির্মিত হলে এর বর্জ্যে দূষিত হবে পানি, অনাবাদি হয়ে পড়বে আশাপাশের ১২০ একর আবাদি জমি। শুধু তায় নয়, পরিবেশ বিপর্যয় সহ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে স্থানীয়রা। তায় জমি চাষাবাদ, পরিবেশ ও স্বাস্থ্য রক্ষায় জনবসতি এলাকায় ফ্যাক্টরি নির্মাণ বন্ধের জোর দাবী তুলে সোমবার দুুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয় কৃষক ও জনসাধারণ।
জানা যায়, সম্প্রতি লামা রাবার ইন্ড্রাসট্রিজ সরই ইউনিয়নের আন্দারী এলাকায় একটি রাবার প্রসেসিং ফ্যাক্টরি স্থাপনের উদ্যোগ নেন। এতে আশপাশ এলাকার রাবার থেকে কস সংগ্রহ করে তা প্রসেসিং করে সীড তৈরি করা হবে। এদিকে ভূগর্ভে পাথর থাকার কারণে এ এলাকায় স্থাপন করা যায় না গভীর নলকূপ। ফলে আন্দারী খালের পানির উপর নির্ভর করে গোটা এলাকার মানুষ।
সরেজমিন দেখা যায়, ফ্যাক্টরি নির্মাণের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে, পাহাড়ের মাটি কেটে সমান করা হচ্ছে। এর পাশেই রয়েছে জনবসতি, আবাসিক ও স্কুল ক্যাম্পাস। এ সময় কথা হয় কৃষক মো.কবির, মো. ফিরোজ, মো. খোকন, রুমথুই মুুরুং, আবদুল মালেক সহ অনেকের সাথে। তারা অনতিবিলম্বে ফ্যাক্টরি অন্যত্র স্থাপনের জোর দাবি জানিয়ে বলেন, ফ্যাক্টরি নির্মাণের জন্য জমি ও পাহাড় কাটছে লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজ কর্তৃপক্ষ। এখানে ফ্যাক্টরি নির্মিত হলে এর বর্জ্যে খালের পানি দূষিত হবে, আশপাশের ১২০ একরের মত জমি অনাবাদি হয়ে পড়বে।
পূর্ব ঢেকিছড়া ত্রিপুরা পাড়া কারবারী রুমতুই মুরুং ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, লামা রাবার ১ হাজার ৬শত একর জমি থাকতে আমাদের পাশে এসেই কেন ফ্যাক্টরি বানাতে হবে, তারা কি চায়, আমরা সবাই চাষাবাদ করতে না পেরে এলাকা ছেড়ে চলে যাই ?
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সরই ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আবদুল হালিম বলেন, লামা রাবারের উচিৎ জন মানবহীন স্থানে ফ্যাক্টরি নির্মান করা। না হলে রাবার ফ্যাক্টরির বর্জ্য মিশ্রিত খালের পানি দিয়ে চাষাবাদ ও দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করলে মানুষ নানা রকম মারাত্মক ব্যধিতে আক্রান্ত হবে। তাছাড়া বাংলাদেশের সনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোয়ান্টাম কসমো স্কুল এন্ড কলেজ এর কয়েক হাজার শিশু কিশোর ও এই পরিবেশ দূষণের শিকার হবে। কারণ এই ফ্যাক্টরি নির্মান করা হচ্ছে আবাসিক ও স্কুল ক্যাম্পাসের কোলঘেষে।
তবে লামা রাবার ইন্ড্রাষ্ট্রিজের ম্যানেজার আরিফ হোসেন জানায়, আন্দারী এলাকায় পরিবেশ সম্মত একটি রাবার প্রসেসিং ফ্যাক্টরি নির্মাণের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর বরাবরে আবেদন করেছি। অনুমোদন পেলে ফ্যাক্টরির কাজ শুরু করা হবে। পাহাড় কাটাসহ স্থানীয়দের অন্য সব অভিযোগ মিথ্যা।
এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মঈন উদ্দিন জানিয়েছেন, স্থানীয় জনসাধারণ ও কৃষকদের অভিযোগ পেয়েছি। পরিবেশের ক্ষতি এবং পানির উৎস নষ্ট হয়, এমন কাজ করতে দেওয়া হবেনা।