পাহাড়ের কথা ডেস্ক |
অপরিকল্পিতভাবে বান্দরবানের লামার মিরিঞ্জা পাহাড় ও এর আশপাশে গড়ে উঠা পর্যটন স্পটগুলো যেন পদে পদে বিপদ। অধিকাংশ রিসোর্ট ও কটেজে নেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। কোথাও আগুনের সূত্রাপাত হলে বিরূপ পরিস্থিতি ধারণ করতে তেমন একটা সময় লাগবে না। সাজেকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে লামার ফায়ার সার্ভিসসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থা। মিরিঞ্জা পাহাড়ের অধিকাংশ রিসোর্টে ও কটেজগুলো নির্মাণ করা হয়েছে ছন, কাঠ ও বাঁশ দিয়ে। এখানে নেই কোনো পানির উৎস। রিসোর্টগুলোতে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থাও প্রায় নেই বললেই চলে। ফলে যে কোন মুহুর্তে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে মিরিঞ্জা পাহাড় ঘুরে দেখা যায়, লামার মিরিঞ্জা পাহাড়ে অধিকাংশ রিসোর্ট ও কটেজ পাহাড়ের উপরের খড়ের মাচাং এবং জুম ঘরগুলো ছন, কাঠ ও বাঁশের তৈরি। এসব রিসোর্ট ও কটেজে হাতেগোনা দু’একটিতে নামেমাত্র অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলেও বেশিরভাগই ফায়ার সার্ভিসের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করছে না। গুটিকয়েক স্থানে ফায়ার এক্সটিংগুইশার বা অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র সিলিন্ডার ছাড়া আর কোনও ব্যবস্থা নেই।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা মিরিঞ্জা পাহাড়ের একটি রিসোর্টে রাত্রিযাপন করেছেন ব্যাংক কর্মকর্তা সাঈদ ইকবাল। তিনি বলেন, এখানে অধিকাংশ রিসোর্ট ও কটেজ ছন, কাঠ ও বাঁশের তৈরি। সাজেকে অগ্নিকাণ্ডের পর আমরা টুরিস্টরা এসব রিসোর্ট ও কটেজে থাকতে আতঙ্কিত। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ থাকবে এখানে সকল রিসোর্ট ও কটেজে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে।
আরেক পর্যটক সামিউল ইসলাম বলেন, মিরিঞ্জা খুবই সুন্দর একটি পাহাড়। এখানে আসলে আমরা সাজেকের মতই অনুভূতি পেয়ে থাকি। সাজেকের মতো বড় ধরনের দূর্ঘটনার ঘটার আগেই এখানে সকলের সচেতন হওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, মিরিঞ্জা পাহাড় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে খুবই উপরে, এছাড়া এখানে আগুন নেভানোর মতো পানির উৎস নাই। পর্যটকসহ সকলের জন্য বিষয়টি খুবই উদ্বেগের।
লামা পর্যটন মালিক সমিতি সূত্র জানা যায়, লামা উপজেলায় সমিতির অধীনে ৬২টি রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে। যায় মধ্যে নিয়মিত পর্যটকদের জন্য চালু আছে বর্তমানে ৩২টি। এছাড়া সমিতির বাহিরে সমগ্র এলাকাজুড়ে যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রিসোর্ট, কটেজ ও রেস্তোরাঁ তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। যার সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়ে যাবে বলে জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের বাসিন্দা মো. জিয়াবুল ইসলাম বলেন, মিরিঞ্জা পাহাড় ও এর আশেপাশের এলাকাগুলোতে রাতারাতি রিসোর্ট, কটেজ ও অবকাশ যাপন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। যার সাথে সম্পৃক্ত অধিকাংশই অপেশাদার লোকজন। এখানে সকল স্থাপনা অপরিকল্পিত। যার ফলে পরিবেশে ও স্থানীয় জনমনে বিরূপ প্রভাব পরছে। পর্যটন সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়মের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের উচিত কঠোরভাবে পদক্ষেপ নেওয়া।মো. রুহুল আমিন নামের আরেকে স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, বান্দরবানের পর্যটন শিল্পে দীর্ঘদিন ধরে খরা চলছে। এ খাতে সংশ্লিষ্টরা বহুদিন যাবৎ লোকসান গুনছেন। যেহেতু মিরিঞ্জা পাহাড় ঘিরে বান্দরবানে পর্যটন শিল্পের নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে তাই এর বিকাশে সকলের এগিয়ে আসা উচিত। সকলের সমন্বিত উদ্যোগে ও পরিকল্পিত ভাবে কাজ করলে এর সুফল পার্বত্যবাসী পাবেন।
মিরিঞ্জা পাহাড়ে আগারং রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী ও লামা পর্যটন মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী মোহাম্মদ সুমন বলেন, সাজেকে অগ্নিকাণ্ডের পর আমরা যারা লামায় পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত সকলে বিষয়টি নিয়ে সচেতন আছি। আমাদের রিসোর্টের স্টাফদের আগুন নেভানোর জন্য প্রাথমিকভাবে ধারণা দিয়েছি। এখানে বড় ধরণের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসতে পারা খুবই প্রয়োজন। তবে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসার মতো রাস্তাঘাট নির্মাণ হয়নি। তিনি আরও বলেন, যেহেতু এখানে পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা রয়েছে, তাই সকলের প্রয়োজন আমাদের সহযোগিতা করা। রাস্তাঘাট সহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ হলে বান্দরবানের পর্যটন শিল্প এগিয়ে যাবে।
লামা ফায়ার স্টেশনে সংশ্লিষ্টরা বলছে, বর্তমানে লামার মিরিঞ্জা পাহাড়ে দিনদিন পর্যটকদের সমাগম বাড়ছে। যেখানে পর্যটকদের জন্য রান্নাবান্নার কাজে এলপিজি গ্যাসের সিলেন্ডারের ব্যবহারও রয়েছে। এছাড়া পাহাড়ের বর্তমানে শুষ্ক মৌসুমে জুম চাষের জন্য জমি তৈরি করতে আগুন লাগিয়ে জুমিয়ারা পাহাড়ের চাষাবাদের স্থান তৈরি করেন। ফলে এখানে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি থাকে। পাহাড়ে এখন প্রকৃতি শুষ্ক থাকায় আগুন এক জায়গায় জ্বালানোর সাথে সাথে বিশাল এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। সেই আগুন নেভানোর কোন ব্যবস্থাও নেই।লামা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, লামায় ৮ টি রিসোর্ট ও কটেজ ফায়ার লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে, যার মধ্যে ৬ টি রিসোর্ট ও কটেজ ফায়ার লাইসেন্স পেয়েছে, প্রক্রিয়ারধীন আছে আর ২ টি রিসোর্ট। বাকি সব হোটেল রিসোর্ট, কটেজ এবং রেস্তোরাঁ ফারায় লাইসেন্স ছাড়া স্থপনা তৈরি করেছে। যাদের নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে কঠোর হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। সূত্র- বার্তা২৪ ডটনেট