চট্টগ্রাম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র এবং একই কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়াসিম আকরামকে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ ১০৮ জনের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা হয়েছে।
রবিবার (১৮ আগস্ট) দিবাগত রাতে চট্টগ্রাম মহানগরের পাঁচলাইশ থানায় মামলাটি দায়ের করেন নিহত কলেজছাত্রের মা জোসনা বেগম। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
১৯ আগস্ট, সোমবার দুপুরে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাঁচলাইশ থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা। তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ওয়াসিম আকরাম নিহতের ঘটনায় তার মা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ ১০৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সেতুমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও আসামি করা হয়েছে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, সাবেক এমপি মহিউদ্দিন বাচ্চু, যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, চসিকের কাউন্সিলর আবদুস ছবুর লিটন, শৈবাল দাশ সুমন, নুর মোস্তফা টিনু, এসরারুল হক এসরার, মোবারক আলী, হারুন অর রশীদ, মোরশেদুল আলম, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, আশরাফুল আলম, গিয়াস উদ্দিন, জহুরলাল হাজারী, হাসান মুরাদ বিপ্লব, জিয়াউল হক সুমন, পুলক খাস্তগীর, নুরুল আলম মিয়া, মোহাম্মদ ওয়াসিম, আবদুস সালাম মাসুম, জাকারিয়া দস্তগীর, মো. ফিরোজ।
এছাড়াও মামলায় আসামি করা হয়েছে ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনি, মো. ইসমাইল, মো. দেলোয়ার, এন. এইচ. মিন্টু, মোহন ঘোষ, মো. আলী, ভ‚বন ঘোষ, আরহাম খান, ইসমাইল উদ্দিন লিটন, দৌলত খান, এনামুল হক মানিক, নুর মোহাম্মদ, মো. সোহেল, নেজাম উদ্দিন, মো. আমজাদ হোসেন, ইরফানুল আলম তুষার, ইব্রাহিম খলিল, জয়নাল উদ্দিন জাহেদ, নুর নবী সাহেদ, শহীদুল ইসলাম, সাগর দাস, জাহেদ হোসেন, জি. এম. তৌশিফ, সাদ্দাম হোসেন ইভান, দেবাশীষ পাল দেবু, মো. জাবেদ, মহিউদ্দিন, মো. জাফর, মো. আলী (সাহেদ), মহিম আজম, দিদারুল আলম, মো. ইলিয়াছ, মো. আলী, মো. ইসহাক, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, দিদারুল আলম মাসুম, মো. মাসুম, জিহান আলী খান, মহিউদ্দিন শাহ, মুজিবুর রহমান রাসেল, মোহাম্মদ রাশেদসহ আরও ১০৮ জনকে। এছাড়াও অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ১০০ থেকে ১৫০ জনকে।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, গত ১৬ জুলাই বিকেল ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে নিহত ওয়াসিম আকরাম পাঁচলাইশ থানার মুরাদপুরের বারকোড রেস্টুরেন্টের সামনে ছিল। তখন ছাত্র জনতার বৈষম্যবিরোধী শান্তিপূর্ণ যৌক্তিক আন্দোলন চলছিল। আন্দোলন চলাকালে আসামিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধনে সারাদেশের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা অস্ত্রসস্ত্রসহ ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।
ওইদিন বিকেল ৪টায় ওয়াসিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল এবং ওইসময়ে তার ওপর আসামিদের নির্দেশে এবং তাদের মুহুর্মুহু বোমা বিস্ফোরণ ও লাঠিসোঠা, হকিস্টিক, কিরিচ এবং মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সমাবেশে আক্রমণ করে। এক পর্যায়ে আসামিদের ছোড়া এলোপাতাড়ি গুলিতে ওয়াসিমের বুকে ও নাভীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়ে। পরে তাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই বিকেলে কোটা সংস্কার আন্দোলনে চট্টগ্রাম মহানগরের মুরাদপুর এলাকায় সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন কলেজছাত্র ওয়াসিম আকরাম। তিনি চট্টগ্রাম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র এবং একই কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্বে ছিলেন। ওয়াসিম কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী শফিউল আলমের ছেলে।
এর আগে, চট্টগ্রাম মহানগরের বহদ্দারহাট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে কলেজছাত্র তানভীর ছিদ্দিকী (১৯) হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও নগরের তিন কাউন্সিলরসহ প্রায় ৮০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
নিহত ছাত্রের চাচা মোহাম্মদ পারভেজ বাদী হয়ে গত ১৬ আগস্ট শুক্রবার দিনগত রাতে নগরীর চান্দগাঁও থানায় মামলাটি করেন। মামলায় ৩৪ জনের নামসহ ৪০ থেকে ৫০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির।